-
Notifications
You must be signed in to change notification settings - Fork 2
/
Copy pathExtracted_text.txt
66 lines (46 loc) · 9.06 KB
/
Extracted_text.txt
1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
13
14
15
16
17
18
19
20
21
22
23
24
25
26
27
28
29
30
31
32
33
34
35
36
37
38
39
40
41
42
43
44
45
46
47
48
49
50
51
52
53
54
55
56
57
58
59
60
61
62
63
64
65
66
--- Page 1 ---
মুক্তিযুদ্ধ: আমাদের স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম, যা ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধের মাধ্যমে
আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করি এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করি। মুক্তিযুদ্ধের
পেছনে ছিল দীর্ঘ দিনের শোষণ, বঞ্চনা এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের মানুষ তাদের অধিকার
ফিরে পেতে আত্মত্যাগ করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত হওয়ার পর থেকে । ব্রিটিশরা ভারতকে
বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করে-_পাকিস্তান এবং ভারত। পাকিস্তান আবার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল: পূর্ব
পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসন
এবং অত্যাচার চলতে থাকে, যার ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক, অথনোতক, এবং রাজনেতিক অধিকার
থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।
ভাষা আন্দোলন: স্বাধীনতার সূচনা
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের প্রথম বড় আন্দোলন। পাকিস্তানি সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা
করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষীদের অনুভূতির বিপরীত ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে বাংলা
ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর গুলি চালানো হয়, এবং এতে কয়েকজন শহীদ হন। এই ভাষা আন্দোলন
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের ভিত্তি রচনা করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং স্বাধীনতার আন্দোলন
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে, কিন্তু
পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে
এবং স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ, শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে
এক এতিহাসিক ভাষণ দেন, যেখানে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে বলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় নিরীহ মানুষের উপর হামলা চালায়, যা ছিল
"অপারেশন সার্চলাইট" নামে পরিচিত। এই বর্বর আক্রমণের পর শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার
ঘোষণা দেন, এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধের ধাপ
মুক্তিযুদ্ধ নয় মাস ধরে চলে এবং এটি তিনটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত ছিল: ১. গেরিলা যুদ্ধ: প্রাথমিক পর্যায়ে
মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা কৌশলে যুদ্ধ পরিচালনা করে। তারা ছোট ছোট দল গঠন করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে
আঘাত হানতে থাকে। ২. মুক্তাঞ্চল গঠন: মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন অঞ্চলকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে এবং সেখান
থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়। ৩. চূড়ান্ত বিজয়: মুক্তিযোদ্ধারা তাদের শক্তি সুসংহত করে এবং
সম্মিলিতভাবে আক্রমণ পরিচালনা করে, যার ফলে হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়।
বিজয়ের দিন
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে, এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম
লাভ করে। এই দিনটি আমাদের বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হন এবং দুই
লক্ষেরও বেশি নারী নির্যাতিত হন। এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।
--- Page 2 ---
মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি আমাদের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি,
এবং জাতীয় পরিচয়কে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ এবং সাহসিকতা আমাদের জাতীয় গৌরবের
প্রতীক, এবং আমাদের প্রজন্মের জন্য প্রেরণার উৎস।
মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি সামরিক সংগ্রাম ছিল না; এটি ছিল স্বাধীনতার স্বপ্নে উজ্জীবিত একটি জাতির চেতনায়
আন্দোলিত হওয়ার ইতিহাস। আমরা আমাদের জাতির এই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়কে স্মরণ করে এবং সম্মান করি,
এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদের সবার।
স্বাধীনতা আমাদের অর্জন, এবং এই অর্জনের পেছনে ছিল অসংখ্য সাহসী মানুষের ত্যাগ। তাদের প্রতি আমাদের
চিরকালীন কৃতজ্ঞতা এবং সম্মান অক্ষুপ্ন রাখতে হবে।